হৃদয়ের টানে ছুটে চলি আমরা......

ইসলাম শুধু একটি নামমাত্র ধর্ম নয়- একটি সভ্যতার পরিচায়কও বটে-

24/01/2011 00:07

ঐশী দিকনির্দেশনার আলোকে চিরন্তর চির-উন্নত সত্যজ্ঞান হলো ধর্ম। আর আমরা যারা ধর্মে বিশ্বাস করি তাদের জন্য ধর্মীয় বিধানের ছাঁচে গড়া সংষ্কৃতিক উৎকর্ষতাকে সভ্যতা বলা যেতে পারে। যেমন মুসলমানদের জন্য ইসলাম হলো একটি সভ্যতার পরিচায়ক। ইসলাম এমনই এক পরিপূর্ণ জীবন বিধান যা ঐশী আলোয় মানবিক গুনাবলীকে জাগিয়ে উন্নত সভ্যতার উন্মেষ ঘটায়। এই জীবন বিধানের বাস্তবায়নে প্রতিটি ক্ষেত্রে জিহাদ অর্থাৎ চেষ্টা-সাধনা করা অত্যন্ত অপরিহার্য।এই সভ্যতায় অর্থনীতি, রাজনীতি, বিশ্বাস ও আদর্শগত, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মনন ইত্যাদি মানবিক চাহিদা ও গুনাবলরি উৎকর্ষতা সাধন অপরিহার্য। তবে মুসলমানদের জন্য সর্ব যুগেই এ সভ্যতার মাপকাঠি হলো আল-কোরআন এবং সুন্নাহর দিকনির্দেশনা। অর্থাৎ কোন যুগে কতটুকু গ্রহণ এবং বর্জন করবেন ইসলামই তা আপনাকে বলে দেবে।

অপরদিকে বিজ্ঞান হলো সত্যে উপনীত হওয়ার জন্য গবেষণালব্ধ পার্থিব জ্ঞান-সমৃদ্ধ সর্বোত্তম মাধ্যম বা পথ। এই বিজ্ঞান সভ্যতারই একটি অংশ বিশেষ। যেহেতু ইসলাম সামগ্রীক অর্থে শুধু একটি ধর্মই নয় বরং একটি সভ্যতাও বটে। তাই সভ্যতারই একটি অংশ হিসেবে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির এ যুগে বাস করে বিজ্ঞানের অবদান ও গগণচুম্বি সাফল্যকে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত মানব মস্তিষ্কের উন্নততর বাস্তব প্রতিফলন হিসেবে গ্রহণ করাই যুক্তিসংগত। তবে বিজ্ঞানের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে বিবেককে সব সময় জাগ্রত রাখতে হবে এবং তা প্রতিরোধের জন্য সোচ্চার হতে হবে। বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহারের মধ্যে যেমন প্রভূত কল্যাণ নিহিত, তেমনি এর অপব্যবহার অকল্যাণকর ও সর্বনাশা ভবিষ্যতকে তরান্বিত করবে বৈকি। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা পার্থিব সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা পূরনের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখে বটে। কিন্তু তাই বলে শুধুমাত্র বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা সাধন করতে পারা বা না পারাকে এককভাবে উন্নত মানব সভ্যতার পরিচায়ক হিসেবে গণ্য করা ঠিক নয়। উন্নত মানব সভ্যতা বলতে সামগ্রিক অর্থে অবশ্যই উন্নত মানবিক গুনাবলীর সম্মিলিত স্ফুরনকেই বোঝানো যেতে পারে।

অবিকৃত ঐশী ধর্ম ও সত্যাশ্রয়ী বিজ্ঞানের মাঝে সব সময়ই একটা নিবিড় সম্পর্ক ও তথ্যগত মৌলিক সামঞ্জস্য বিরাজ করে। একজন ধর্মভীরু যখন ধর্মান্ধতার ঊর্ধ্বে থেকে ঐশী ধর্মকে সঠিকভাবে চিনতে ও জানতে পারে, তখন সে বিজ্ঞানকে অস্বীকার তো করেই না; বরং উৎসাহিত করে এবং বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার ও অনুসন্ধানের সারনির্যাস থেকে সত্যকে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত, অভিভূত ও আকৃষ্ট হয়। ঠিক তেমনি একজন সত্যান্বেষী বিজ্ঞানী যখন তার গবেষণা কর্মের পাশাপাশি স্বচ্ছ হৃদয়ে একরোখা অহংকারের ঊর্ধ্বে থেকে ঐশী ধর্মের মূলবক্তব্য ও উদ্দেশ্য বুঝতে স্বচেষ্ট হয়, তখন রূপক ও অলৌকিক বিষয়গুলোও ধীরে ধীরে তার কাছে বোধগম্য হতে থাকে। ফলে চরম সত্য ও অসীম শক্তির সামনে মাথা নত করতে সে বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হয় না; বরং প্রতিটি পরতে পরতে সেই অসীম শক্তির সুনিয়ন্ত্রিত পরশ অনুভব করতে পেরে বিস্মিত ও বিমুগ্ধ হয়। কিন্তু কতিপয় অহংকারী ও স্বার্থান্বেষী মানুষ স্বার্থ হাসিলের নেশায় সর্বকালেই ধর্ম ও বিজ্ঞানের নামে কতগুলো খেয়ালী ভ্রান্ত মতবাদের জন্ম দিয়েছে এবং ছলনার মাধ্যমে ধর্ম ও বিজ্ঞানের প্রকৃত বক্তব্য ভিন্নরূপে উপস্থাপন ও প্রচার করে সত্যকে ঢেকে রাখতে চেয়েছে। ফলে এ দুটোর মূল উদ্দেশ্য ও মর্ম অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে সাধারন মানুষেরা প্রায়ই বিপথে পা বাড়াচ্ছে ও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এসব কারণে ধর্মেরই একটি নিকটতম অংশ বিজ্ঞানকে যেমন পদদলিত হতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে, তেমনি বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে ধর্মকেও তুচ্ছজ্ঞান অর্থাৎ অস্বীকার করার মত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে। এ কথাটা সব সময় স্মরণ রাখা উচিত যে, সসীম কখনও অসীমকে ধরতে, ছুঁতে ও চর্মচক্ষুতে দেখতেও পারে না। তবে সাধনার দ্বারা প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে অনুভব করতে পারে। সেই সাধনা মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি পূর্ণ আনুগত্যশীল আধ্যাত্মিক সাধনা হোক অথবা পার্থিব জ্ঞান-সমৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক গবেষণা হোক, আল্লাহ্‌ প্রদত্ত সামর্থ্য ও আপন নিয়ত অনুসারেই একজন মানুষ তাঁর মর্মকথা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। তবে একাগ্রচিত্তে ঐশী-ভাবাদর্শে লালিত বৈরাগ্যবাদ মুক্ত আধ্যাত্মিক সাধনার দ্বারা মানবাত্মার পরিশুদ্ধি অর্জন এবং সেইসঙ্গে সত্যশ্রয়ী বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা-চেতনার উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে সত্যকে অতি সহজেই চেনা যায়।

প্রকৃত অর্থে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করলে একজন নিরহংকার মানুষ আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যশীল হতে বাধ্য হয়। তবে অহংকারী বিজ্ঞানীরা জেদের বশে কখন কখন সত্যকে জেনেও না জানার ভান করে এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান করে থাকে। ঈমানদার মানুষ হিসেবে সকলকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। সবার আগে আল-কোরআনের বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ও মর্মার্থ অনুধাবনে তৎপর হতে হবে এবং আজীবন চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। জ্ঞানগর্ভ কিতাব আল-কোরআনে বিজ্ঞানের বিস্তারিত বিবরণ নেই বটে। তবে এতে মহাবিশ্বের সৃষ্টি থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত সর্ববিধ উল্লেখযোগ্য ও পথ প্রদর্শনকারী ঘটনাগুলো সম্পর্কে এবং সার্বজনীন কল্যাণকর আইন কানুন ও রীতি নীতির বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ঐশী ইংগিত প্রদান করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও সাফল্যকে সরাসরি অস্বীকার বা উপেক্ষা না করে সত্যিকার বিজ্ঞান চর্চায় মনোনিবেশ করতে হবে। অসত্য ও চক্রান্তমূলক তত্ত্ব ও বক্তব্যগুলোকে যাচাই করে দেখতে হবে এবং প্রকৃত সত্য সর্বসাধারনের মাঝে তুলে ধরতে হবে। নব প্রজন্মকে বিভ্রান্তির নাগপাশ থেকে মুক্ত করে তদের অন্তর সত্য ও সুন্দরের আলোয় আলোকিত করে তোলার লক্ষ্যে এই জ্ঞানময় জেহাদের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে মহাবিশ্বের সৃষ্টি, পৃথিবীতে জীবনের উন্মেষ এবং মানবজাতির আগমনকে নিয়ে প্রকৃতিবাদ, তথাকথিত বির্তনবাদ ইত্যাদি নানা মতবাদের আড়ালে নাস্তিকতা, তৃতত্ত্ববাদ, বহুতত্ত্ববাদ ( এক আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে শরিক করে তার বন্দনা ও সাহায্য কামনার মতবাদ ) ইত্যাদি নানা ধর্মীয় ভ্রান্তির প্রচার ও প্রসার ঘটেছে এবং ঘটছে। ইতিমধ্যেই এর বিরুদ্ধে জ্ঞানী ঈমানদারগণ তাদের জ্ঞানগর্ভ লেখনীতে জিহাদ ঘোষণা করে বেশ দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করেছেন। এ বিষয়ে আরও সূহ্ম ও অত্যাধুনিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে শক্তভাবে এগিয়ে এলে ভ্রান্ত মতবাদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত সকল মিথ্যাচারী কর্মকান্ড অচিরেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে ইন্‌শাআল্লাহ্‌।

HTML Comment Box is loading comments...

free counters
Back

Search site

পরিচালনায়- নাজমুল হাসান >>>> সম্পাদনায়-আরাফাত রহমান রানা

obj=new Object;obj.clockfile="5031-blue.swf";obj.TimeZone="GMT0600";obj.width=145;obj.height=50;obj.wmode="transparent";showClock(obj);