কে তুমি ?
23/01/2011 23:08হে ইনসান,
অল্প সময়ের ব্যবধানেই তোমার অস্তিত্ব এই ধরাপৃষ্ঠে। কয়েকদিন পূর্বে দুনিয়ার বুকে তোমার সত্ত্বা বলতে কিছুই ছিলনা। তুমি ছিলে কল্পনাতীত। সমাজে কত ঘটনা ঘটত, কিন্তু তুমি কি তার কোন খবর রাখতে? না, রাখতে না। কারণ, তখনো হয়তবা তোমার বাবা-মা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি।
তাই তো আল্লাহ তাআলা বলেন :
هَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُنْ شَيْئًا مَذْكُورًا ﴿1﴾
মানুষের উপর এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে, যখন সে উল্লেখযোগ্য কোন বস্তুই ছিলেনা। (সূরা দাহর : ১)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষের দৃষ্টি এক নিগূঢ় তত্ত্বের দিকে আকৃষ্ট করেছেন। মানুষ যদি সামান্য জ্ঞান-বুদ্ধিরও অধিকারী হয় এবং এই তত্ত্ব সম্পর্কে কিছুটা চিন্তা-ভাবনা করে তবে একটিকে নিজের স্বরূপ তার কাছে উদ্ভাসিত হবে এবং অপরদিকে স্রষ্টার অস্তিত্ব, তার জ্ঞান ও অপার শক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করা ছাড়া তার গত্যন্তর থাকবে না।
হে ভাই,
তুমি কেন গর্ব করছ? তুমি তো বীর্যরূপে বাবার ঔরশ থেকে মায়ের গর্ভে সঞ্চালিত হয়েছ। অতঃপর প্রথমে রক্তপিন্ড, পরে মাংসপিন্ত আকার ধারণ করে মানবরূপী কায়াতে পরিণত হয়েছ। তুমি কি জান সেখানে তুমি কী খেয়েছ? খেয়েছ মায়ের দেহের অপ্রয়োজনীয় ও পরিত্যক্ত পদার্থ। ভূমিষ্ট হওয়ার পর চিনতে না তুমি ডান-বাম, চিনতেনা বাবা মা, বন্ধু-বান্ধব। খেতে জানতে না। খাইয়ে দিতে হত অপরকে। আজ তুমি বড় বুদ্ধিমান হয়ে বসেছ; তাই না? আল্লাহর হুকুম আহকামের পরোয়া করছনা। বিরোধিতা করছ? তুমি কি মনে করছ তোমার এ শক্তি চিরস্থায়ী? তোমার যৌবনে কখনো ভাটা পড়বেনা? চেয়ে দেখ ফেরাউনের দিকে কোথায় তার রাজত্ব? কারুনের মাল-সম্পদ কি তাকে আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা করতে পেরেছে? তোমার জীবন ক্ষুদ্র হলে কি হবে; তোমাকে পাড়ি দিতে হবে জীবন নৌকার প্রতিটি ঘাটি। তুমি যে সৃষ্টি সেরা মাখলুক।
শুধু তা-ই নও, তুমি নবীকূল শিরমনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠ উম্মদের দলভূক্ত। ভয় নেই, এগুতে থাক। তোমার পূর্বে আর কেউ কি জান্নাতে যেতে পারবে? না কখনো না। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতই সর্বপ্রথম বেহেশতে প্রবেশ করার সৌভাগ্য লাভ করবে।
তুমি অবশ্য জান, দুনিয়াতে যার মর্যাদা সবচেয়ে বেশি তার দায়িত্বও সবচেয়ে বেশি। অতএব, মর্যাদা পেয়ে বসে থাকলে চলবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব পেয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে হবে। অতীত জীবনের সময়টুকু তো পূর্ব থেকেই হাতছাড়া, আর ভবিষ্যত জীবন তো অনিশ্চিত। তাহলে এবার কি করবে? বসে থাকলে চলবেনা। আজই কার্য সম্পাদন করব বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। এদিকে আজকের দিনটি হলো অতীত ও ভবিষ্যতের সংযোগস্থল, যার কোন স্থায়ীত্ব নেই। এর গতি অত্যন্ত প্রবল। অতএব, সময়কে কাজে লাগিয়ে এর থেকে তোমার প্রাপ্য কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নিতে হবে। তুমি তোমার যৌবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে অবশ্যই।
হে বন্ধু,
তুমি নিজেকে চিনতে পারনি, তুমি যে ফেরেশতার চেয়েও উত্তম। তুমি আল্লাহর দরবারে আলোচিত ব্যক্তি। তুমি আল্লাহ তাআলার ফেরেশতাগণের বন্ধু। তোমার বিয়োগে আসমানের দরজাসমূহ কাঁদবে। তাহলে কি তুমি দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আখেরাতের সৌভাগ্যের দিকে ধাবিত হবে না? জেনে রাখবে আখেরাতের প্রথম ঘাটি কবর। তুমি জান কবরে তোমার কি অবস্থা হবে? কবর প্রতিদিন চিৎকার করে বলতে থাকে: আমি পোক-মাকড়ের ঘর, আমি নির্জন বাসস্থান, এখানে ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা সবই সমান। তোমার কোন চিহ্ন বাকি থাকবে না।
তবে তুমি যদি আল্লাহর নিকট মুসলিম (আত্মসমর্পনকারী) বান্দা হয়ে উপস্থিত হও তবে সে ব্যাপার টা ভিন্ন। তিনি তথায় তোমাকে জান্নাতের পোষাক পরাতে পারেন ও বিছানা বিছিয়ে দিতে পারেন। যদি সেথায় তুমি আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করতে চাও তাহলে তোমাকে আল্লাহর হুকুম মানতে হবে ও নবীর আদর্শ মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে হবে। কোন প্রকার বেদআতের আশ্রয় নেয়া যাবে না।
হে কবর পথের যাত্রী,
তুমি কি জান কবর মাঝে তোমাকে কত কঠিন প্রশ্নের সম্মুখ্খীন হতে হবে? আসবে দুই ফেরেশতা একযোগে, তোমাকে উঠিয়ে বসাবেন একসাথে। অতঃপর একসঙ্গে প্রশ্ন করা হবে-
তোমার রব কে?
সেদিন আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত আর কোন উপায় থাকবেনা। তাই চল আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জন করার পথে অগ্রসর হই। এর জন্য যদি দুনিয়ার কিছু ত্যাগ করতে হয় তবুও পিছপা হওয়া যাবেনা।
এ দুনিয়া নেহায়েতই তুচ্ছ। নেই কোন এর মূল্য। কাফের-মুশরিক-মুনাফিক-নাস্তিক সকলেই সমানভাবে ভোগ করছে।
ভয় নেই বন্ধু ভয় নেই। আল্লাহর রহমতের দিকে অগ্রসর হতে না হতেই তা তোমাকে স্পর্শ করবে দৌড়িয়ে। মহাপ্রলয়ে সবকিছু ধ্বংস হওয়ার সাথে সাথে তোমার অস্তিত্বও কি বিলীন হয়ে যাবে? না তুমি তো বিলীন হওয়ার মত নও। দ্বিতীয়বার যখন সিংগায় ফূক দেয়া হবে তখনই তোমার দন্ডায়মান হতে হবে মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে । তার সামনে হিসাব দিতে হবে তিলে তিলে। সেদিন সকল মানুষ থাকবে হতভম্ব, নিরব নিস্তব্ধ পরিস্থিতিতে সকলেই থাকবে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম কথা বলে সুপারিশ করে তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন।
তাই আসুন, প্রথমে নিজেকে চিনে মুহাম্মদ সাঃ এর তরীকায় আল্লাহর ইবাদত করে নিজেকে জান্নাতে যাওয়ার উপযুক্ত করে নেই। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুক। আমীন।
সূত্র: https://www.islamhouse.com
Tags:
———
Back