হৃদয়ের টানে ছুটে চলি আমরা......

পৃথিবীর মতো বাসোপযোগী গ্রহের সন্ধান

24/01/2011 02:15

এই প্রথম বিজ্ঞানীরা প্রাণের বসবাস-উপযোগী একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান্তা ক্রুজ ও কার্নিজি ইনস্টিটিউশন অব ওয়াশিংটনের একদল গ্রহসন্ধানী জ্যোতির্বিদ গত বুধবার রাতে এ ঘোষণা দেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সৌরজগতের বাইরে 'গি্লজ ৫৮১' নামের তারা ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে গ্রহটি। নতুন আবিষ্কৃত এ গ্রহ খুব গরম নয়, খুব ঠাণ্ডাও নয়। গ্রহটির অন্যান্য ভৌত-বৈশিষ্ট্যও প্রাণের অস্তিত্বের জন্য খুবই অনুকূল।
সদ্য আবিষ্কৃত গ্রহটি মহাকাশের বিভিন্ন নক্ষত্রজগতের দূরত্বের তুলনায় পৃথিবী থেকে যথেষ্ট কাছেই অবস্থান করছে। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০ আলোকবর্ষ (এক আলোকবর্ষ সমান প্রায় ৯ লাখ ৪৬ হাজার কোটি কিলোমিটার)। অর্থাৎ আমরা যদি পৃথিবী থেকে এমন একটি নভোযানে চড়ি, যার গতিবেগ আলোর গতির ১০ ভাগের এক ভাগ, তবে নতুন এ গ্রহে পেঁৗছাতে প্রায় ২০০ বছর সময় লাগবে।
এ পর্যন্ত গি্লজ ৫৮১ নক্ষত্রের ছয়টি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর ভেতরে দুটি গ্রহ কয়েক বছর আগেই আবিষ্কার করা হয়েছিল, যার একটি ছিল যথেষ্ট উষ্ণ; অন্যটি খুব বেশি শীতল। সদ্য আবিষ্কৃত গ্রহটি আগের দুটি গ্রহের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। অবস্থান হিসেবে এর নাম দেওয়া হয়েছে 'গি্লজ ৫৮১-জি'।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর তুলনায় গ্রহটির 'ব্যাসার্ধ' ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৪ গুণ বেশি। 'ভর' বেশি ৩ দশমিক ১ থেকে ৪ দশমিক ৩ গুণ। তবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর প্রায় সমান অথবা সামান্য বেশি। ফলে পৃথিবীর মানুষ এতে অনায়াসেই হাঁটাহাঁটি করতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের তুলনাও পৃথিবীর যথেষ্ট কাছাকাছি। গ্রহটির উপরিভাগের গড় তাপমাত্রা অবশ্য পৃথিবীর তুলনায় একটু বেশি শীতল_সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের চেয়ে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিমাঙ্কের চেয়ে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে। তবে এ তাপমাত্রায়ও প্রাণের অস্তিত্ব ভালোমতোই টিকে থাকা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
গ্রহটির 'সূর্য' অর্থাৎ আলোর উৎস (গি্লজ ৫৮১) একটি লাল বামন নক্ষত্র। সূর্য এর চেয়ে আকারে প্রায় তিন গুণ বড় এবং তাপমাত্রায় প্রায় ৫০ গুণ বেশি উষ্ণ। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৯ কোটি মাইল। সে হিসাবে আবিষ্কৃত গ্রহটি তার আলোর উৎস থেকে অনেক কাছে_মাত্র দেড় কোটি মাইল। এর সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে গ্রহটির সময় লাগে মাত্র ৩৭ দিন, যেখানে পৃথিবীর লাগে ৩৬৫ দিন। বিজ্ঞানীরা আরো বলেছেন, তরল পানি, পাথুরে স্থলভাগ ও একটি সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল রয়েছে গ্রহটির।
সব মিলিয়ে গ্রহটিকে পৃথিবীর প্রাণীর জন্য চমৎকার আবাসযোগ্য গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করছেন সান্তা ক্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভেন ভোত। গ্রহটির একটি অংশ সব সময় এর সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, বিপরীত অংশ থাকে অন্ধকারে। গ্রহটির আলো-আঁধারের মধ্যবর্তী অঞ্চলটি প্রাণের বসবাসের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করেন অধ্যাপক স্টিভেন। এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, 'আমরা এত দ্রুত পৃথিবীর এত কাছাকাছি গ্রহটির সন্ধান পেয়েছি যে এটি এ ধরনের আরো গ্রহ আবিষ্কারের ব্যাপারে আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে।'
আলোকরশ্মির গতির পরোক্ষ পদ্ধতির (ইনডাইরেক্ট মেথড রেডিয়াল ভেলোসিটি) মাধ্যমে কেক-১ টেলিস্কোপ দিয়ে গ্রহটি আবিষ্কার করা হয়েছে। এ জন্য বিজ্ঞানীদের ১১ বছর অনুসন্ধান চালাতে হয়েছে।
প্রাণের বসবাসের উপযুক্ত কোনো গ্রহের অস্তিত্ব কল্পবিজ্ঞানের মতো। প্রাণের আবাসযোগ্য পরিবেশের জন্য চাই এমন সব জটিল শর্তের সমন্বয়, যার অনেক কিছুর মেলার পরও অঙ্কের চূড়ান্ত ফলাফলে অনিশ্চয়তা থেকে যায় অনেক। অতীতে সৌরজগতের বাইরে বিভিন্ন সময় প্রায় ৫০০ ছোট-বড় গ্রহের সন্ধান মিলেছে। তবে সেগুলো প্রাণের বসবাস-উপযোগী ছিল না। তবে নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটির ক্ষেত্রে এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা রয়ে গেছে। সূত্র : নাসা

HTML Comment Box is loading comments...

free counters
Back

Search site

পরিচালনায়- নাজমুল হাসান >>>> সম্পাদনায়-আরাফাত রহমান রানা

obj=new Object;obj.clockfile="5031-blue.swf";obj.TimeZone="GMT0600";obj.width=145;obj.height=50;obj.wmode="transparent";showClock(obj);