হৃদয়ের টানে ছুটে চলি আমরা......

“সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?” – এই প্রশ্নের সরল উত্তর

23/01/2011 23:10

মুক্তমনা” নাস্তিকরা, “ডি-জুস”-কালচারে-বড়-হওয়া নিজের দ্বীন-সম্বন্ধে-একেবারে-অজ্ঞ কোন কিশোর বা তরুণকে যে ক’টি প্রশ্ন করে ভড়কে দেয়, তার একটি হচ্ছে: “সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?” অথচ, একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে, এই প্রশ্নটা সেই গ্রাম্য “শঠ-পন্ডিতের” সাথে “সত্যিকার পন্ডিতের” বিতর্কের প্রসিদ্ধ গল্পের মত – যেখানে “শঠ-পন্ডিত” তার প্রতিদ্বন্দিকে জিজ্ঞেস করেছিল: I don’t know – মানে কি?
চলুন দেখি “সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?” এই প্রশ্নের একটা সরল উত্তর ভেবে দেখা যাক:

স্রষ্টা এমন সত্তা যিনি সৃষ্ট নন, তিনি অস্তিত্বে আসনে নি বরং সর্বদা অস্তত্বিশীল এবং তিনি সৃষ্টিজগতের স্থান-কাল কাঠামোর অংশ নন ৷ আর এজন্যই তিনি অসৃষ্ট বা অবস্তু, ফলে তাঁর সৃষ্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই ৷ এজন্য স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছেন, এই প্রশ্নটিই অবান্তর ৷ যেমন একটি ছবি কে এঁকেছে, এর উত্তরে একজন চিত্রশিল্পীর অস্তিত্ব থাকা আবশ্যক, কিন্তু “চিত্রশিল্পীকে কে এঁকেছে?” এই প্রশ্নটি অবান্তর কেননা চিত্রশিল্পীর ক্ষেত্রে “আঁকা” নামক ক্রিয়াটি প্রযোজ্য নয় ৷ তাই চিত্রশিল্পীর অংকিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, অন্য কথায় “অংকিত নয়” এমন একজন অংকনকারী থাকা সম্ভব ৷ একইভাবে “সৃষ্ট নন”, এমন একজন স্রষ্টা থাকা সম্ভব, তাই বার্ট্রান্ড রাসেলের “হু ক্রিয়েটেড গড মাম?” এই প্রশ্ন করা অযৌক্তিক, অবান্তর, বোকামী ৷ আরেকটা উদাহরণ দেয়া যাক ৷ ধরা যাক আপনি অনেক দীর্ঘ একটি তাসের সারির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনি দেখছেন একটি একটি করে তাস পড়ে যাচেছ এবং পড়ে যাওয়ার সময় সে পরের তাসটিকে ধাক্কা দিচ্ছে, ফলে পরের তাসটিও পড়ে যাচেছ, এভাবে একটি তাসের পতনের কারণ হচ্ছে তার পূর্বের তাসটি, তার পতনের কারণ তার পূর্বের তাসটি, তার পতনের কারণ তার পূর্বের তাসটি, এভাবে যেতে থাকলে একটি তাসে গিয়ে আপনাকে থামতেই হবে যেটি প্রথম তাস ৷ এখন যদি প্রশ্ন করা হয় যে, প্রথম তাসের পতনের কারণ কি? উত্তরে বলা যাবে না যে সেটিও একটি তাস, ফলে বুঝতে হবে যে প্রথম তাসের পতনের কারণ এমন কিছু যে নিজে তাস নয় ৷ হয়ত সে একজন মানুষ যে প্রথম তাসটিকে টোকা দিয়েছে ৷ এই মানুষটি যেহেতু তাস নয়, সেজন্য তাসের ক্ষেত্রে যে বৈশিষ্ট্যসূচক প্রশ্ন করা যাবে, এই মানুষের ক্ষেত্রে তা করা যাবে না ৷ যেমন তাসের ক্ষেত্রে প্রশ্ন করা যায় যে “তাসটি কি হরতন না ইস্কাপন?”, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটি অবান্তর ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও তাসের পতনের পেছনে আদি কারণ হিসেবে মানুষ থাকার বিষয়টি বাস্তব ৷ ঠিক তেমনি স্রষ্টা যেহেতু সৃষ্টি নন কিংবা ফল নন, সেহেতু “তাঁর স্রষ্টা কে?” বা “কারণ কি?” এই প্রশ্নগুলি তাঁর বেলায় প্রযোজ্য নয় – কিন্তু তাঁর থাকার বিষয়টি বাস্তব ৷ এখানে আপাতদৃষ্টিতে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, যদি স্রষ্টাকে অস্তিত্বে আনার প্রয়োজন নেই বলে ধরে নেই, তবে খোদ মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেই একথা ধরে নেই না কেন ? এর কারণ এই যে, মহাবিশ্ব কোন “জ্ঞানসম্পন্ন সত্তা” নয় যে নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, পরিচালনা করতে পারে। বরং মহাবিশ্বের সকল ব্যবস্থা ও সকল অংশ ইংগিত করছে যে, তা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। এজন্য কোন স্রষ্টা ব্যতীত মহাবিশ্বের স্বয়ংসর্ম্পূণ অস্তিত্বের ধারণা সর্ম্পূণ যুক্তি বিরোধী, তাই এক্ষেত্রে একমাত্র যৌক্তিক সম্ভাবনা হচ্ছে এই যে, এর একজন জ্ঞানী স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রণকারী থাকতে হবে যিনি নিজে সৃষ্ট নন।

HTML Comment Box is loading comments...

free counters
Back

Search site

পরিচালনায়- নাজমুল হাসান >>>> সম্পাদনায়-আরাফাত রহমান রানা

obj=new Object;obj.clockfile="5031-blue.swf";obj.TimeZone="GMT0600";obj.width=145;obj.height=50;obj.wmode="transparent";showClock(obj);